শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ১১:৪৮ পূর্বাহ্ন

কেমন হবে ২০২০ সালের বিশ্ব

কেমন হবে ২০২০ সালের বিশ্ব

তারেক শামসুর রেহমান:
কেমন হবে ২০২০ সালের বিশ্ব? ২০১৯ সালের বিশ্ব এক ধরনের সংকটের মধ্য দিয়ে গেছে। ২০২০ সালেও এই সংকট কি অব্যাহত থাকবে? চলতি বছরের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু তার আগেই তিনি অভিশংসনের মুখোমুখি হয়েছেন। চলতি বছর অনেকগুলো বিষয়ের দিকে দৃষ্টি থাকবে সারা বিশ্বের। যে বিষয়গুলোর দিকে বিশ্বের নজর থাকবে, তা অনেকটা এ রকম : ১. যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, ২. ব্রেক্সিট কার্যকর হওয়া, ৩. যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ ও এর প্রতিক্রিয়া, ৪. যুক্তরাষ্ট্র-ইরান উত্তেজনা, ৫. আফগানিস্তানে তালেবানদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, ৬. বিভিন্ন দেশে নির্বাচন, ৭. ভূ-রাজনৈতিক ‘ফ্লাশপয়েন্ট’, ৮. বিশ্বমন্দার আশঙ্কা ও প্রবৃদ্ধি ইত্যাদি। সবকিছু ছাপিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সঙ্গে বিশ^রাজনীতির গতি-প্রকৃতি অনেকাংশে নির্ভরশীল। ২০১৬ সালের বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হয়েছিলেন। ওই নির্বাচন নিয়েও অনেক কথা ছিল। নির্বাচনের পর দীর্ঘদিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ওইসব ‘বিতর্ক’ মোকাবিলা করতে হয়। একটা বড় ‘বিতর্ক’ ছিল প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ! ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ট্রাম্প শপথ গ্রহণ করার পরও দীর্ঘদিন এই বিতর্ক মার্কিন রাজনীতিতে প্রভাব ফেলেছিল। এবারও ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নতুন করে অপর এক ‘বিতর্ক’-এর মুখোমুখি হতে হচ্ছে আর তা হচ্ছে ডেমোক্র্যাটদলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী জো বাইডেন ও তার ছেলের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের একটি গ্যাস কোম্পানির দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে ফোন করে ‘চাপ’ দেওয়া। এটি তার বিরুদ্ধে একটি বড় অভিযোগ। আরেকটি অভিযোগ হচ্ছে তার বিরুদ্ধে যখন নানা অভিযোগ আসতে থাকে, তখন কংগ্রেস ওইসব অভিযোগ ‘তদন্ত’ করতে শুরু করে। কিন্তু তদন্তকাজে ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ স্টাফদের সাক্ষী দিতে বাধা দেন। তথ্য-প্রমাণ ধামাচাপা দেওয়ারও চেষ্টা করেন তিনি। ওই দুটো প্রধান অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিনিধি সভা ইতিমধ্যে তাকে অভিশংসিত বা ‘ইমপিচ’ করেছে। জানুয়ারিতে সিনেটেও এ বিষয়ে ভোটাভুটি হবে। প্রতিনিধি সভার মতো সিনেটও যদি ট্রাম্পকে ‘ইমপিচ’ করে, শুধু তখনই তাকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অপসারণ করা সম্ভব। না হলে তাকে অপসারণ করা যাবে না। প্রতিনিধি সভায় ট্রাম্পের সমর্থকদের সংখ্যা কম। সে কারণে তিনি সেখানে ‘ইমপিচ’ হয়েছেন। কিন্তু সিনেটে তার সমর্থকদের সংখ্যা বেশি। ফলে সিনেটে তাকে ‘ইমপিচ’ করা যাবে না। চূড়ান্ত বিচারে তাই ‘ইমপিচড’ হওয়ার সম্ভাবনা কম। কিন্তু তারপরও নানা বিতর্কের মধ্য দিয়ে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে এসব বিতর্ক নির্বাচনে কতটুকু প্রভাব ফেলবে, এটা একটা বড় প্রশ্ন।
বলা ভালো, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন নির্বাচকমণ্ডলীর ভোটে। নির্বাচকমণ্ডলীর সংখ্যা ৫৩৮। সিনেট ও প্রতিনিধি সভার সদস্যদের দিয়ে নির্বাচকমণ্ডলী গঠিত। কোনো প্রার্থী কোনো রাজ্যে বিজয়ী হলে তিনি ওই রাজ্যে নির্বাচকমণ্ডলীর যে কটি ভোট রয়েছে, তার পুরোটা তিনি পেয়েছেন বলে ধরা হয়। যে প্রার্থী হেরে যান, তিনি নির্বাচকমণ্ডলীর কোনো ভোট পান না। সংগত কারণেই তাই ট্রাম্পের ‘আচরণ’-এর ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে। চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পাশাপাশি আরও বেশ কটি দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, আঞ্চলিক রাজনীতিতে তা কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলবে। যেমন বলা যেতে পারে, আফ্রিকায়, মিসর, ইথিওপিয়া ও ঘানার সাধারণ নির্বাচন, এশিয়ায় তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, মিয়ানমার ও শ্রীলঙ্কার সংসদ নির্বাচন এবং ভারতের দিল্লি, বিহারের বিধানসভার নির্বাচন। ইউরোপে পোল্যান্ডে ও মলদোভায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, একই সঙ্গে ক্রোয়েশিয়া, জর্জিয়া, লিথুনিয়া, রোমানিয়া ও সার্বিয়ায় সংসদ নির্বাচন। মধ্যপ্রাচ্যে ইরান, ইসরায়েল, জর্ডানে সংসদ নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে। এসব নির্বাচন আঞ্চলিক রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ইউরোপে ডানপন্থি রাজনীতির উত্থান ঘটেছে। ব্রিটেনে কনজারভেটিভ পার্টির বিজয় (১২ ডিসেম্বর, ২০১৯) ইউরোপে ডানপন্থি উত্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে। এখন দেখার পালা এই উত্থান ইউরোপের অন্য দেশগুলোর নির্বাচনে কী প্রভাব ফেলে।
চলতি জানুয়ারি মাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে ইউরোপে। চলতি জানুয়ারিতে ব্রেক্সিট কার্যকর হবে। গেল বছর (২০১৯) ব্রেক্সিট নিয়ে (ইইউ থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়া) ব্রিটেনের রাজনীতি উত্তপ্ত ছিল। ব্রেক্সিট হবে কি না, হলে কীভাবে হবে, কখন হবে, চুক্তিতে কী থাকবে আর কী থাকবে না, নাকি আদৌ কোনো চুক্তি হবে না এসব নিয়ে ব্রিটেনের পার্লামেন্ট উত্তপ্ত ছিল। ব্রেক্সিটকে কেন্দ্র করে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন (জুলাই ২০১৯) ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। উত্থান ঘটে ব্রেক্সিটপন্থি হিসেবে পরিচিত ডানপন্থি রাজনৈতিক বরিস জনসনের। একের পর এক নাটকীয় ঘটনা ঘটতে থাকে ব্রিটেনের রাজনীতিতে। গেল বছরের ২৯ মার্চ ব্রেক্সিট চুক্তি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পার্লামেন্টের বিরোধিতার কারণে দুই দফা সেই চুক্তি প্রত্যাখ্যাত হয়। এর রেশ ধরে থেরেসা মে পদত্যাগে বাধ্য হন। ২৪ জুলাই বরিস জনসন নয়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ব্রেক্সিট কার্যকর করা হবে এ ঘোষণা দিয়ে ১০ সেপ্টেম্বর ৫ সপ্তাহের জন্য পার্লামেন্ট স্থগিত রাখার কৌশল নেন। বিরোধীরা বিষয়টি আদালতে তোলে। ২৪ সেপ্টেম্বর দেশটির সুপ্রিম কোর্ট এক ঐতিহাসিক রায়ে সরকারের পার্লামেন্ট স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তকে অবৈধ বলে রায় দেয়। ফলে আবার পার্লামেন্ট বসে। আর ১৭ অক্টোবর বরিস জনসন ইইউর সঙ্গে নতুন একটি চুক্তি করেন। আর পার্লামেন্টেই সিদ্ধান্ত হয় যে, ২০২০ সালে ৩১ জানুয়ারি ব্রিটেন চূড়ান্তভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাবে। এরই মধ্যে বরিস জনসন আগাম নির্বাচনের ডাক দিয়েছিলেন আর সে অনুযায়ী ১২ ডিসেম্বর ব্রিটেনে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে সবাইকে অবাক করে দিয়ে বরিস জনসন ও কনজারভেটিভ পার্টি বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত এক গণভোটে ব্রিটেনের মানুষ ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে রায় দিয়েছিল। আর ৩১ জানুয়ারি তা বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। বলা ভালো, ১৯৭৩ সালে ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত হয়। এর ৪৭ বছর পর ব্রিটেন এখন ইইউ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়া ইইউর পতনকে ত্বরান্বিত করবে কি না সেটাই এখন বড় বিষয়। তবে চলতি বছর বিষয়টি যে ইউরোপের সর্বত্র আলোচিত হবে এবং এর একটি প্রতিক্রিয়া পড়বে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গবেষকরা ১০টি গুরুত্বপূর্ণ ভূরাজনৈতিক ‘ফ্লাশপয়েন্ট’ বা গুরুত্বপূর্ণ স্থানের কথা বলেছেন, যেদিকে ২০২০ সালে দৃষ্টি থাকবে অনেকের। এই ‘ফ্লাশপয়েন্ট’গুলো হচ্ছে আফগানিস্তান, ইয়েমেন, ইথিওপিয়া, বুরকিনা ফাসো, লিবিয়া, ইরান-ইসরায়েল ও মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাষ্ট্র-উত্তর কোরিয়া সম্পর্ক, কাশ্মীর, ভেনেজুয়েলা ও ইউক্রেন। আফগানিস্তানে আশরাফ ঘানি পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন, যদিও ওই নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছেন তার অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ। তালেবানদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সংলাপ চলতি বছরও অব্যাহত থাকবে। এখানে আলোচনা সীমাবদ্ধ রয়েছে দুটি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে সব সৈন্য প্রত্যাহার করে নেবে আর তালেবানরা আল-কায়েদার সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করবে। আলোচনা চলছে ও তালেবানরা যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে এটা একটা প্লাস পয়েন্ট। তবে যুক্তরাষ্ট্র যদি তার সব সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়, তাহলে তা তালেবানদের রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে একধাপ এগিয়ে নেবে কি না এ প্রশ্ন এখন অনেকের। ইয়েমেনের সংকট সমাধানে জাতিসংঘ একটি উদ্যোগ নিয়েছে। ইয়েমেনে হুতিদের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের ‘যুদ্ধ’ সেখানে বড় ধরনের দুর্ভিক্ষের জন্ম দিয়েছে। শত শত শিশুর মৃত্যুর খবর সংবাদপত্রে ছাপা হলেও ইয়েমেন সংকটের কোনো সমাধান হয়নি। এই সংকট বাহ্যত ইরান-সৌদি দ্বন্দ্বেরই ফল। ইরান-সৌদি দ্বন্দ্ব মধ্যপ্রাচ্যে ইত্তেজনা বৃদ্ধি করেছে। হুতিদের সমর্থন করছে ইরান। ফলে এক ধরনের ‘প্রক্সিওয়ার’-এর জন্ম হয়েছে এ অঞ্চলে। একদিকে সৌদি-ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্র অ্যালায়েন্স, অন্যদিকে ইরান-ইরাক ঐক্য। যুক্তরাষ্ট্র সেখানে কিছু সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। এরপর ইরাকে মার্কিন দূতাবাসে হামলা হয়েছে। একজন মার্কিন কনট্রাক্টর নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে ইরানপন্থি হাশেদ আল শাবি গোষ্ঠী দূতাবাসে হামলার জন্য দায়ী। মার্কিন বিমান ইরাকের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এই গোষ্ঠীর ২৪ জনকে হত্যাও করে। ফলে সিরিয়ায় উত্তেজনা কিছুটা স্তিমিত হয়ে এলেও, এখন ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় তা এখন বড় ধরনের আঞ্চলিক যুদ্ধের জন্ম দিচ্ছে। চলতি বছর ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতি হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
লিবিয়া আরেকটি ‘ফ্লাশপয়েন্ট’, সেখানকার সংকট নতুন একটি মাত্রা পেয়েছে, যখন তুরস্ক এই সংকটে নিজেদের জড়িত হওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। লিবিয়ায় কার্যত কোনো সরকার নেই। যুদ্ধবাজরা সেখানে এক-এক অঞ্চল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। ত্রিপোলিতে প্রধানমন্ত্রী ফায়েজ আল সাররাজের নেতৃত্বে একটি সরকার রয়েছে, যাকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় স্বীকার করে। আবার পূর্ব লিবিয়া নিয়ন্ত্রণ করে জেনারেল খলিফা হাফতার, যিনি একসময় গাদ্দাফির কাছের লোক ছিলেন। হাফতারকে সমর্থন করছে মিসর, আবুধাবি ও মস্কো। যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে সাররাজ সরকারকে। তুরস্ক এখন সাররাজ সরকারের সমর্থনে সেখানে সেনাবাহিনী পাঠাতে চাচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে লিবিয়া সংকট একটি আঞ্চলিক যুদ্ধে পরিণত হতে যাচ্ছে। কাশ্মীর, ভেনেজুয়েলা ও ল্যাটিন আমেরিকায় ২০১৯ সালে যে ‘সংকট’-এর জন্ম হয়েছিল, চলতি বছরও তার রেশ থেকে যাবে। মোদি সরকারও গেল বছর এনআরসি ও সিএএ নিয়ে যে ‘রাজনৈতিক সংকট’-এ পড়েছিল, তা চলতি বছর আরও ঘনীভূত হবে। ফলে এক ধরনের ‘উত্তেজনা’ ও আস্থাহীনতা বিশ্ব প্রত্যক্ষ করবে চলতি বছর। (০২ জানুয়ারি, ২০২০)
লেখক : অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
tsrahmanbd@yahoo. com

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877